এম এ সৈয়দ তন্ময় রাজশাহী বিভাগীয় চীফ : নওগাঁয় যৌতুকের দাবিতে বর্বচিত নির্যাতনে শিকার গৃহবধুু হাবিবা দীর্ঘ আট মাসপর মারা গেছে। মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে নওগাঁ শহরের দক্ষিন হাট-নওগাঁ মহল্লায় গৃহশিক্ষক বাবা হাফিজুর রহমানের বাড়িতে মারা যায়। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত করেছে। বাদ আসর জানাযা নামাজ শেষে নওগাঁ সরকারি গোবরস্থানে দাফন করা হবে বলে নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়।
নির্যাতনের ঘটনায় হাবিবার বাবা হাফিজুর রহমান বাদী হয়ে ০৬/০২/১৭ তারিখে নওগাঁ সদর মডেল থানায় তিনজনকে আসামি করে মামলা করে। মামলার পর ছেলে অভি ও তার বাবা শামসুজ্জোহা খানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বর্তমানে হাইকোর্ট থেকে শামসুজ্জোহা খান জামিনে আছেন বলে জানা গেছে। তবে ঘটনার পর থেকে আজও ছেলের মা সৈয়দা তাহমিনাকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।
জানা যায়, নওগাঁ শহরের দক্ষিন হাট-নওগাঁ মহল্লার হাফিজুর রহমানের মেয়ে হাবিবা খাতুনের সাথে একই মহল্লার শামসুজ্জোহা খান বিদ্যুতের ছেলে তামভি হাসান অভির প্রেমের সম্পর্ক ছিল। হাবিবা নওগাঁ পিএম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান বিভাগের দশম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্রী। হাবিবা পঞ্চম শ্রেণীতে বৃত্তি, অষ্টম শ্রেণীতে জিপিএ-৫ এবং ২০১৫ সালে জেলা মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অর্জন করে।
গত ২৩ আগষ্ট’১৬ হাবিবা স্কুলে আসার নাম করে প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে পালিয়ে গিয়ে কোর্ট ম্যারেজের মাধ্যমে অভিকে বিয়ে করে। বিয়ের পর থেকে হাবিবা বাবার বাড়িতে যোগাযোগ রাখত না। কিন্তু বিয়ের তিন মাসের মাথায় হাবিবাকে বাবার বাড়ী থেকে দুই লাখ টাকা নিয়ে আসতে বলে অভির পরিবার। এতোগুলো টাকা হাবিবার বাবা গৃহশিক্ষক হাফিজুর রহমানের পক্ষে দেয়া সম্ভব নয়। এ নিয়ে হাবিবাকে প্রায় নির্যাতন করত স্বামীর পরিবার।
গত ৩০ নভেম্বর বিকেলে হাবিবার বাবার কাছে খবর পাঠানো হয় তার মেয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে মারা গেছে। কিন্তু ছেলের পরিবার ওইদিন হাবিবাকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জীবিত বলে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করতে বলে। এর ৪দিন পর অচেতন হাবিবাকে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে নিয়ে যায় স্বামীর লোকজন। মেয়েকে দেখতে হাবিবার পরিবার রাজশাহীতে গেলে হাসপাতালে দেয়া ঠিকানায় খুঁজে পাওয়া যায়নি। এরপর কয়েকজনের সহযোগীতায় প্রায় ছয়দিন পর রাজশাহীতে অভির এক আতœীয়ের বাড়ী থেকে অচেতন হাবিবাকে উদ্ধার করা হয়।
এরপর হাফিজুর রহমান তার মেয়েকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। নির্যাতনের শিকার হাবিবার মাথার পিছনে ও মাজায় বড় ক্ষতের সৃষ্টি হয়। এছাড়া নির্যাতনে ফলে দুটি দাঁত ভেঙ্গে যায়। খাবার দেয়া হয় নাক দিয়ে। কথা বলতে পারত না। শরীরের কোন অংশই যেন তার কাজ করত না। শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকত। আর একটু পর পর চোখের পাতা ফেলত। দীর্ঘ ১৬ দিন লাইফ সাপোর্টে রাখার পর হাবিবাকে চিকিৎসকরা হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তির পরামর্শ দেন। সেখানে ৩ দিন থাকার পর বাড়ি নিয়ে যেতে বলেন চিকিৎসকরা। গত ২৪ ফেব্রুয়ারী’১৭ আবার নওগাঁ সদর হাসপাতালে আবারও হাবিবাকে ভর্তি করা হয়। কয়েকদিন চিকিৎসার পর অর্থসংকটে পরায় হাবিবাকে বাড়িতে নিয়ে যায় তার বাবা। এতোদিন বাবার বাড়িতেই ছিল। দীর্ঘ আট মাস পর মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে মারা যায় হাবিবা।
সরেজমিনে এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘ দিনে সেবাযতœ করা বাবা মা শোকে যেন পাথর হয়ে গেছে। চোখের পানি শুকিয়ে গেছে। কান্নাও করতেও ভুলে গেছে তারা। প্রতিবেশীরা এসে শেষ বারের মতো হাবিবার লাশটা দেখে যাচ্ছেন।
হাবিবার বাবা হাফিজুর রহমান বলেন, যৌতুকের জন্য আমার মেয়েকে বিভিন্ন ভাবে শারিরীক নির্যাতন করা হয়েছিল। বিভিন্ন চিকিৎসা করার পর শারীরিক কোন উন্নতি হয়নি। অবশেষে মৃত্যুর কোলে ঢলে পরতে হল তাকে। আমি এর ন্যায় বিচার চাই।
নওগাঁ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোরিকুল ইসলাম বলেন, সংবাদ পেয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্ত করা হয়েছে। মামলার মূল আসামী গ্রেফতার আছে। আর ছেলের মা সৈয়দা তাহমিনাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
নওগাঁয় যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনে শিকার গৃহবধু হাবিবার মৃত্যু
সকল প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। পাঠকের মতামতের জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়। লেখাটির দায় সম্পূর্ন লেখকের।